পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - ধারকের শক্তি ও ব্যবহার

     একটি আহিত ধারক প্রচুর পরিমাণে শক্তি তড়িৎ বিভব শক্তি হিসেবে সঞ্চয় করে। একটি আহিত ধারকের শক্তি হলো একে আহিত করতে প্রয়োজনীয় মোট কাজের পরিমাণ। আবার একে ক্ষরিত হতে দেয়া হলে ঐ শক্তি ফিরে পাওয়া যায়।

     ধরা যাক, কোনো ধারকের ধারকত্ব C। আহিত করার সময় এর পাতে Q পরিমাণ আধান দেওয়ায় এর পাতদ্বয়ের বিভব পার্থক্য হলো V এবং আহিত করতে U পরিমাণ কাজ করতে হলো। সুতরাং ধারকটিতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ U। এখন ধারকের পাতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আধান dQ প্রদান করতে যদি dU পরিমাণ কাজ হয় এবং এর ফলে ধারকটির শক্তি dU পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে,

   dU = VdQ

বা, dU=QCdQ

      আহিত করার সময় ধারকটিতে Q = 0 থেকে Q = Q পরিমাণ আধান প্রদান করা হলে এর শক্তি U = 0 থেকে U = U তে উন্নীত হয়। সুতরাং উপরিউক্ত সমীকরণকে এ সীমার মধ্যে যোগজীকরণ করে মোট কাজের পরিমাণ পাওয়া যাবে। 

   একটি আহিত ধারকে সঞ্চিত শক্তি নির্ভর করে ধারকে সঞ্চিত আধান, ধারকের দুই পাতের বিভব পার্থক্য এবং ধারকের ধারকত্বের ওপর। একটি নির্দিষ্ট ধারকে সঞ্চিত শক্তি তার আধানের বর্গের সমানুপাতিক ।

ধারকের ব্যবহার (Uses of Capacitors )

     নিম্ন বিভবে তড়িতাধান জমা করার জন্য ধারক ব্যবহৃত হয়। বেতার, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনে ধারক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দু প্রকারের ধারক বেশি ব্যবহৃত হয়। স্থিরমান ধারক ও পরিবর্তনশীল ধারক। 

     

চিত্র :২.১৯

(ক) স্থিরমান ধারক :

   এ প্রকার ধারকে অনেকগুলো টিনের পাত পর পর সাজানো থাকে। টিনের পাতগুলোর মাঝে অভ্রের পাত বা মোমে ডুবানো কাগজ বা সিরামিক বসানো থাকে। টিনের একটি অন্তর একটি পাত একত্রে সংযুক্ত থাকে যাতে প্রতিটি পাতের উভয় পৃষ্ঠই আলাদা পাত হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এক সেট পাত P বিন্দুতে এবং অপর সেট পাত R বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে [চিত্র ২.১৯]।

     P ও R বিন্দুর একটি ভূ-সংযুক্ত থাকে। এর সাহায্যে অল্প জায়গার মধ্যে বিরাট ক্ষেত্রফলের দুটি চ্যাপ্টা পাতের একটি তুল্য ধারক পাওয়া যায়। এখানে অভ্র, সিরামিক বা মোমে ডুবানো কাগজ অন্তরক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। স্থায়িত্ব বৃদ্ধি এবং শক্তিক্ষয় হ্রাস করার জন্য অন্তরক হিসেবে আজকাল কাগজের পরিবর্তে পাতলা পলিস্টারিনের স্তর ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে অবশ্য ইলেকট্রোলাইটিক ধারকের ব্যবহার বেশ বাড়ছে।     

(খ) পরিবর্তনশীল ধারক :

      দুই সেট ধাতব পাত দ্বারা পরিবর্তনশীল ধারক তৈরি করা হয়। এর এক সেট স্থির থাকে। অপর সেট একটি দণ্ডের সাথে আটকানো থাকে। দণ্ডটি ঘুরালে এই সেটটি স্থির সেটের ফাঁকে ঘুরতে পারে [চিত্র ২.২১]। এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক মাধ্যম হচ্ছে বায়ু। দণ্ডটি ঘুরালে পাতগুলোর কার্যকর ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয়। সুতরাং ধারকত্বের পরিবর্তন হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনিং-এর কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার : 

      দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রকার বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রোনিক যন্ত্রপাতিতে ধারক ব্যবহৃত হয়। রেডিও, টিভি, ফোন, ফ্যান, টিউবলাইট প্রভৃতিতে আমরা ধারকের ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাই।(খ) পরিবর্তনশীল ধারক : দুই সেট ধাতব পাত দ্বারা পরিবর্তনশীল ধারক তৈরি করা হয়। এর এক সেট স্থির থাকে। অপর সেট একটি দণ্ডের সাথে আটকানো থাকে। দণ্ডটি ঘুরালে এই সেটটি স্থির সেটের ফাঁকে ঘুরতে পারে [চিত্র ২.২১]। এক্ষেত্রে ডাইইলেকট্রিক মাধ্যম হচ্ছে বায়ু। দণ্ডটি ঘুরালে পাতগুলোর কার্যকর ক্ষেত্রফলের পরিবর্তন হয়। সুতরাং ধারকত্বের পরিবর্তন হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনিং-এর কাজে এটি ব্যবহৃত হয়।

Content added || updated By

     আমরা জানি, এক শ্রেণির পদার্থ আছে, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে যাদের মধ্য দিয়ে আধান মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে । এদেরকে বলা হয় পরিবাহী। ধাতব পদার্থসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্গত। আরেক শ্রেণির পদার্থ আছে যাদের বলা হয় অপরিবাহী বা অন্তরক বা ডাইইলেকট্রিক বা পরাবৈদ্যুতিক মাধ্যম, যাদের মধ্য দিয়ে আধান চলাচল করতে পারে না । রাবার, অ্যাম্বার, কাচ ইত্যাদি এদের মধ্যে পড়ে।

     আমরা জানি, কোনো পরিবাহীর বা একাধিক পরিবাহীর সমন্বয়ে গঠিত কোনো সমাবেশের বিভব বৃদ্ধি করলে এটি আধান ধরে রাখতে পারে। এই পরিবাহী বা সমাবেশকে বলা হয় ধারক। দেখা গেছে যে, একটি সমান্তরাল পাত ধারকের দুই পাতের মাঝখানে কোনো ডাইইলেকট্রিক রাখলে ধারকের ধারকত্ব বৃদ্ধি পায়। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে ডাইইলেকট্রিকের মধ্যে এমন কী আছে যা ধারকের ধারকত্ব বাড়িয়ে দেয়? ডাইইলেকট্রিকের উপস্থিতিতে ধারকত্ব বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে একই আধানের জন্য ভোল্টেজ তথা বিভব পার্থক্য কমে যাওয়া। যেহেতু বিভব পার্থক্য হচ্ছে ধারকের তড়িৎ ক্ষেত্রের যোগজ, কাজেই আমরা বলতে পারি ধারকের পাতের আধান একই থাকলেও ধারকের অভ্যন্তরে তথা দুই পাতের মাঝে তড়িৎ ক্ষেত্র হ্রাস পায়।

       আবার ধারকের দুই পাতের মাঝখানে পরিবাহী মাধ্যম থাকলেও তড়িৎ ক্ষেত্র হ্রাস পায়, কেননা ধারকের পাতের মুখোমুখি পরিবাহীর দুই পৃষ্ঠে আবিষ্ট আধানের উদ্ভব হয়। কিন্তু সমপরিমাণ ডাইইলেইট্রিকের জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রের হ্রাস অনেক বেশি হয়, কেননা ডাইইলেকট্রিক মাধ্যমে কোনো মুক্ত আধান থাকে না। আর যদি দুই পাতের মধ্যবর্তী স্থান ডাইইলেকট্রিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ করা হয়, তাহলে তড়িৎ প্রাবল্য শূন্য হয়। এর থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, তড়িৎ ক্ষেত্রের প্রভাবে ডাইইলেকট্রিকের অভ্যন্তরে আধানের সামান্য সরণ হয় ফলে ডাইইলেকট্রিকের দুই পৃষ্ঠে আবিষ্ট আধানের উদ্ভব ঘটে।

     ধারকের পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে কোনো ডাইইলেকট্রিক থাকাকালে ধারকত্ব C এবং ডাইইলেকট্রিক না থাকাকালে ধারকত্ব C0 হলে এই দুই অবস্থায় ধারকত্বের অনুপাত সর্বদা একটি ধ্রুব সংখ্যা হয়। এই ধ্ৰুৰ সংখ্যাকে ঐ ডাইইলেকট্রিক মাধ্যমের ডাইইলেকট্রিক ভেদনযোগ্যতা বা তড়িৎ মাধ্যমাঙ্ক বলে।

   K=CC0=ডাইইলেকট্রিক পূর্ণ ধারকের ধারকত্ব/ডাইইলেকট্রিক শূন্য ধারকের ধারকত্ব 

Content added || updated By

আরও দেখুন...